প্রয়োজনে
0196 356 4505
ফকির উয়ায়ছী:
হালাল হারাম এই শব্দ দুটি মুসলমানদের
খুবই পরিচিত শব্দ সকলেরই জানা। কিন্তু এই শব্দ ব্যবহার হয় শুধু মুখে মুখেই শুনা যায়।
অবশ্য আমার দেশের বাইরে বিভিন্ন দ্রব্যের গায়ে লেখা থাকে ১০০% হালাল। তা দেখে মুসলমান
মানুষ বুঝতে পারে এটা হালাল। যদি আমার সংস্কারের সুযোগ থাকতো আমি লেখতে চেষ্টা করতাম
“হালাল টাকায় কিনুন”।
ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে কলেমা
ছাড়া বাকী চারটিতে ভেজাল দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে আছে অধিকাংশ মানুষের। আমার কথা হয়তো ভাল
লাগছে না পুরো লেখাটি পড়লে দ্বিমত করার কতটুকু সুযোগ পান সেটাই দেখার বিষয়।
১ নং কলেমা: কলেমা সম্পর্কে মানুষ
বুঝে না বুঝে পড়ে যাচ্ছে কোন ভেজাল করতে পারছেন না। আর যারা বুঝে পড়ছেন ইয়াকীনের সাথে
রাসূল সা. যেভাবে বলেছেন সেভাবে বুঝে নিলে তো তার জন্য জান্নাতের সু-সংবাদ রয়েছেই আল্লাহর
পক্ষ থেকে। রাসূল সা. বলেছেন “মান কানা
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাছুলুল্লাহ ইয়াকীনান ফাদাকাল্লাল জান্নাতা” অর্থাৎ
যে ব্যক্তি একবার ইয়াকীন (বিশ্বাস) এর সহিত কলেমা পাঠ করবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ
দিতে।
২ নং নামায: আমরা নামাযে যখন
দাড়াই আমাদের মাথায় নানান চিন্তা এসে ভর করে এমনকি যখন ৭০গুন সোয়াবের আশায় মসজিদে যাই
তখনও একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করতে পারি কয়জনে। ঘরে যারা পরছি তাদেরকে তো কিছুই বলার
নাই। কিন্তু মসজিদে যারা আসছেন তাদের তো সতর্ক করার দ্বায়ীত্ত্ব বিজ্ঞ আলেমগন নিতেই
পারেন। তা তো করতে দেখি না। আমি যদি সংস্কারের সুযোগ পেতাম সমজিদের গেটে লিখে দিতাম
অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনকারী মসজিদে ঢুকা নিষেধ। এই কথা লিখলে ইমাম মিলানো কঠিন হবে।
কিন্তু যে কয়জনই লোক মসজিদে ঢুকার যোগ্যতা থাকবে তাদের মধ্য থেকেই একজন ইমামতি করলে
সেটা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। কাজেই কোন সংস্কারকের মাথায় কবে এটা আসবে এই অপেক্ষায়
থাকা ছাড়া বিকল্প নাই আমি নাদানের কথা শুনবে কে?
৩ নং রোযা: রাসূল সা. হাদিস অনুযায়ী
যে ছয়টি জিনিষ ত্যাগ করার কথা তা যদি শুধু এক মাস ধরে রাখার জন্য করা হয়। সেটা অনাহারী
বা উপোশ থাকা ব্যতীত কিছুই নয়। সাড়া জীবনের জন্য কুচিন্তা এবং কুকর্ম হইতে নিজকে বিরত
রাখতে হবে। পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রন করে অবৈধ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারলে রোযার স্বার্থকতা
আসবে। ক)যেমন চুক্ষ দ্বারা অবৈধ কিছু দেখবোনা। খ)কান দ্বারা অবৈধ কিছু শুনবো না। গ)নাক
দ্বারা অবৈধ ঘ্রান গ্রহন করবো না। ঘ)জিবহা দ্বারা অবৈধ স্বাধ গ্রহন করবোনা এবং অবৈধ
কথা বলবো না। ঙ)হাত দ্বারা অবৈধ জিনিষ ধরবোনা এবং চ)অবৈধ চিন্তা চেতনা করবোনা। তাহলেই
রোযার পরিপূর্ণতা আসবে। সংস্কারের সুবিধা থাকলে বলার ইচ্ছা রাখি অবৈধ উপার্জনের অর্থ
ঘর পরিবারে ব্যবহার হলে রোযা রাখা নিষেধ।
৪ নং যাকাত: যাকাত শব্দের সাথে
আর্থিক সম্পর্ক কোরআনে বুঝা যায় না। কারণ যাকাত শব্দের অর্থ পাওয়া যায় পবিত্রতা। একটি
আয়াত এখানে কোট করছি পড়লেই বুঝা যাবে যাকাত যে শুধুই অর্থ নয়। সূরা মুজাদালাহ ৫৮:১৩#
“তোমরা কি কানকথা বলার পূর্বে সদকা প্রদান করতে ভীত হয়ে গেলে? অতঃপর তোমরা যখন সদকা
দিতে পারলে না এবং আল্লাহ তোমাদেরকে মাফ করে দিলেন তখন তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত
প্রদান কর”।
আমরা সকরেই জানি সদকা সামান্য
টাকা এমনকি পয়সা কোন নির্ধারিত পরিমান নয়। হাদিসে বর্ণিত মালের যাকাত তো ৪০ ভাগের এক
ভাগ বা শতকরা ২.৫ শতাংশ। ভুল বুঝবেন না। উক্ত আয়াতে আল্লাহ কি বললেন তোমরা সদকা দিতে
পাররে না। তখন যাকাত দাও। আমি গরিবের উপর কি আল্লাহ জুলুমের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন! তা
মোটেই না। আল্লাহ সহ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেন না। উক্ত আয়াতে যে যাকাতের কথা বলা হয়েছে
সেটা কোন ক্রমেই টাকা হতেই পারে না।
আমার সংস্কারের কথা বলার হক থাকলে
অবৈধ উপার্জনকারীদের জন্য যাকাত/ফেতরা দেওয়া নিষেধ করতাম এবং যাকাত প্রদানের আগে যাকাত
প্রদানকারী ব্যক্তি থেকে হালাল রুজির স্বীকারোক্তি নামা জমা দিতে বলতাম।এই দিকে চিন্তা
তো করেই না কেউ। যাকাত প্রদানকারীরা মনে করে অবৈধ টাকার ভাগ ২.৫% হিসাবে আল্লাহর নামে
দিয়ে বৈধ করা যাবে এতে মনে হয় আল্লাহও অবৈধ টাকা গ্রহন করবেন। (নাউজুবিল্লাহ)
৫ নং হজ্ব: অর্থবানেদের জন্য
হজ্জ করা ফরজ। বিশেষ করে সরকারী চাকুরীজীবি হজ্জ পালকারীদের কয়জনে অবৈধ টাকা ছাড়া হজ্জ
করতে পারেন। আপনার নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করবেন। রোযার মাস শেষ হলেই অনেক অফিসারই হজ্জে
যাওয়া তৈরী করেন। বড় বড় স্যারদের এসিসেট্যান্টদের কাছে ফাইল নিয়ে গেলে স্যারদের প্রতি
সদয় হয়ে এসিসেট্যান্টরা বলেন ফাইল নড়বে তবে স্যার কিন্তু এইবার হজ্জে যাবেন স্যারের
খরচ আছে অনেক। হজ্জের ময়দানেও এই অবৈধ টাকা দিয়ে হজ্জ করা নিষেধ এটাও মানা করেন না।
মানুষ তার নিত্যদিনের শয়তান সাথীকে সঙ্গে রেখে যখন ছোট, মাঝারি, বড় শয়তানের দিকে কঙ্কর
নিক্ষেপ করে; সাথে থাকা শয়তানটা কতই না পুলকিত হয়। দোয়া পড়ে ছোট ছোট কঙ্করগুলি নিজের
গায়ে মারা হতো তাতেও শয়তান বিতারিত হওয়ার কিছু সম্ভাবনা থাকতো। যদি হাজী সাহেবগন হজ্জ
থেকে ফিরে এসে সে কথা মনে রাখেন। বিজ্ঞ ফতোয়াবাজগন যদি প্রতিবারই এই কথাটা বলে সতর্ক
করেন যে “অবৈধ উপার্জনকারীরা হজ্জে আসবেন না।” তবে, অন্তত প্রতি লাখে এক জন হলেও অবৈধ
রোজগার থেকে বিরত থাকতো। কোন আলেমের কাছে এটা বলার আশা ছেড়েই দিয়েছি। কিন্তু আশায় রয়েছি
তবে মানুষের কাছে নয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে কত চমৎকারই দেখি! হজ্জের রছম কোরবানীর কোন
পশু যদি বলে উঠে হালাল টাকা ছাড়া আমায় কিনবেন না এবং ছুরি চালাবেন না আমার গলায়। তখন
যদি ভয়ে নিবৃত হয় কিছু মানুষ।
এনবি:- কেউ কেউ মনে করে আমি হালাল
টাকা দিয়েই ইসলামের কাজ গুলি করবো। অবৈধ টাকা অন্য কাজে ব্যবহার করবো। এখানে একটা কথা
উল্লেখ করা প্রয়োজন। যেমন আপনার পাচ কেজি খাটি দুধের সাথে আমার পানি মিশ্রীত এক কেজি
দুধ মিলালে যেমন পুরো ৬ কেজি দুধটুকুর সাথেই পানি মিশ্রীত হয়ে যাবে। ঠিক সেরকম আপনার
হালাল টাকার সাথে যখন অবৈধ্ আয় (টাকা) মিলে যায় তখন সমস্ত টাকাই অবৈধ টাকায় পরিনত নয়।
সেই ৬ কেজি দুধের মত। কাজেই কেউ যদি মনে করে আমি আমার হালাল টাকা দিয়েই দান করছি, রোযার
ইফতার করছি, যাকাত দিচ্ছি, কোরবানী এবং হ্জ্জ করছি সেটা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। যেহেতু
অবৈধ রোজগার টাকা দিয়ে তার অন্য প্রয়োজন মিটানো হচ্ছে।

No comments:
Post a Comment